Header Ads Widget

Responsive Advertisement

বলিভিয়ায় দুই দশকের সমাজতান্ত্রিক শাসনের অবসান, নতুন মধ্য-ডানপন্থী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত



এইমাত্র পাওয়া সংবাদ প্রতিবেদন :ঢাকা, ২০ অক্টোবর ২০২৫ : লাতিন আমেরিকার দেশ বলিভিয়ায় দুই দশকের সমাজতান্ত্রিক শাসনের অবসান ঘটেছে। দেশটির ভোটাররা রোববার মধ্য-ডানপন্থী সিনেটর রদ্রিগো পাজ পেরেইরাকে নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত করেছেন। সমাজতান্ত্রিক সরকারের আমলে অর্থনৈতিক সংকটে বিপর্যস্ত বলিভিয়া এবার দিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছে।

লা পাজ থেকে বার্তাসংস্থা এএফপি জানিয়েছে, সুপ্রিম ইলেক্টোরাল ট্রাইব্যুনাল (টিএসই) এর হিসাবে ৯৭.৮ শতাংশ ভোট গণনা শেষে রদ্রিগো পাজ পেয়েছেন ৫৪.৬ শতাংশ ভোট, আর তার প্রতিদ্বন্দ্বী—ডানপন্থী সাবেক অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ ফার্নান্দো “তুতো” কুইরোগা রামিরেজ পেয়েছেন ৪৫.৪ শতাংশ ভোট

ফলাফল ঘোষণার পর লা পাজের রাস্তায় আনন্দমিছিল, সঙ্গীত ও আতশবাজিতে ভরে ওঠে শহর।
৪০ বছর বয়সী আইনজীবী জুলিও আন্দ্রে বলেন, “আমরা আজ বলিভিয়ার জন্য নতুন দিকনির্দেশনার আশা নিয়ে উদযাপন করছি।”

নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো পাজ, সাবেক প্রেসিডেন্টের পুত্র, প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন “সকলের জন্য পুঁজিবাদ (Capitalism for All)” ধারণায় অর্থনৈতিক সংস্কার আনার। তাঁর পরিকল্পনায় রয়েছে বিকেন্দ্রীকরণ, কর হ্রাস, আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং সামাজিক ব্যয় অব্যাহত রাখা।

তিনি এমন এক দেশের নেতৃত্ব নিতে যাচ্ছেন, যেখানে সাবেক প্রেসিডেন্ট ইভো মোরালেস জ্বালানি সম্পদ জাতীয়করণ করে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে চীন, রাশিয়া, কিউবা ও ভেনিজুয়েলার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন।

নির্বাচনী ফল ঘোষণার পর ভাইস-প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী এডম্যান্ড লারা এক বিবৃতিতে বলেন, “আমরা ঐক্য ও পুনর্মিলনের পথে এগিয়ে যেতে চাই। দেশের অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারে আমাদের হাতে কাজের সুযোগ এসেছে।”

বলিভিয়া বর্তমানে তীব্র অর্থনৈতিক সংকটে রয়েছে। দেশে ডিজেল ও পেট্রোল সরবরাহে ঘাটতি, খাদ্যদ্রব্যের উচ্চমূল্য, এবং ২০ শতাংশের বেশি বার্ষিক মুদ্রাস্ফীতি নাগরিক জীবনে গভীর প্রভাব ফেলছে। রাজধানী লা পাজসহ বিভিন্ন এলাকায় জ্বালানির জন্য দীর্ঘ লাইন এখন প্রতিদিনের চিত্র।

আগস্টের প্রথম নির্বাচনী রাউন্ডে ভোটাররা মোরালেসের প্রতিষ্ঠিত মুভমেন্ট টুওয়ার্ড সোশ্যালিজম (MAS) দলকে প্রত্যাখ্যান করেন। এতে মোরালেসের প্রবর্তিত জাতীয়করণভিত্তিক অর্থনৈতিক নীতিরও কার্যত সমাপ্তি ঘটে।

বিদায়ী প্রেসিডেন্ট লুইস আর্সের শাসনামলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকট, জ্বালানি ঘাটতি এবং উৎপাদন খাতে স্থবিরতা দেশটির অর্থনীতিকে দুর্বল করে তোলে।

লা পাজে ভোট দিতে এসে ৫৬ বছর বয়সী গৃহিণী মারিয়া ইউজেনিয়া পেনারান্ডা বলেন, “আমরা এখন পরিবর্তন চাই। দেশের উন্নতি দেখতে চাই। এই কষ্টের জীবন আর চলতে পারে না।”

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রদ্রিগো পাজের নেতৃত্বে বলিভিয়া নতুন অর্থনৈতিক বাস্তবতার দিকে এগোবে—যেখানে মুক্তবাজার অর্থনীতি ও সামাজিক কল্যাণের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা থাকবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ