Header Ads Widget

Responsive Advertisement

ট্রাম্প কেন পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ নিতে চান? কারণ ও প্রেক্ষাপট



এইমাত্র পাওয়া সংবাদ প্রতিবেদন :

নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পানামা খাল পুনর্দখলের ইচ্ছা: বিতর্ক ও প্রতিক্রিয়া

ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেননি, কিন্তু বিতর্কিত মন্তব্য করে আবারও শিরোনামে এসেছেন। সম্প্রতি তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন, যা নিয়ে শুরু হয়েছে ব্যাপক সমালোচনা।

পানামা খালের গুরুত্ব

সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা পানামা খালের ইতিহাস এবং এর কৌশলগত গুরুত্ব বিশদভাবে তুলে ধরেছে। খালটি ১৯১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র নির্মাণ করে এবং এটি আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরকে সংযুক্ত করে। বৈশ্বিক বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ এই জলপথে প্রতি বছর প্রায় ১৪ হাজার জাহাজ চলাচল করে। মার্কিন কনটেইনার পরিবহনের প্রায় ৪০ শতাংশই এই খালের উপর নির্ভরশীল।

ট্রাম্পের বক্তব্য

রোববার (২২ ডিসেম্বর) আরিজোনায় ‘আমেরিকাফেস্ট’ অনুষ্ঠানে ট্রাম্প বলেন, ‘পানামা খালের মাধ্যমে আমাদের প্রতারণা করা হয়েছে। এটি আমাদের দেওয়া উচিত ছিল না। যুক্তরাষ্ট্র বোকামি করে এটি ছেড়ে দিয়েছে। আমরা এটি ভুল হাতে পড়তে দেব না।’

পরে তিনি নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ পানামা খালের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা ওড়ানো একটি ছবি পোস্ট করে লেখেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের খালে স্বাগতম!’

পানামার প্রতিক্রিয়া

ট্রাম্পের এই মন্তব্যে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন পানামার প্রেসিডেন্ট হোসে রাউল মুলিনো। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘পানামা খালের প্রতিটি বর্গমিটার এবং এর আশপাশের এলাকা পানামার অধীনে ছিল এবং থাকবে। চীনের কোনো প্রভাব এখানে নেই।’

তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, চীনের সঙ্গে সম্পর্কিত হংকংভিত্তিক সিকে হাচিসন হোল্ডিংস কেবলমাত্র খালের দুটি বন্দর পরিচালনা করে।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

১৯৭৭ সালের টরিজোস-কার্টার চুক্তি অনুযায়ী ১৯৯৯ সালে পানামা খালের মালিকানা পানামা সরকারের কাছে হস্তান্তর করে যুক্তরাষ্ট্র। যদিও খালটি বৈশ্বিক বাণিজ্যে এবং যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত স্বার্থে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এই চুক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও পানামার সম্পর্কের নতুন অধ্যায় তৈরি করেছিল।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ট্রাম্পের মন্তব্য কেবল যুক্তরাষ্ট্র ও পানামার সম্পর্কের অবনতির কারণ হবে না; বরং এটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও ভূরাজনীতিতেও উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে। পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চীনের বিনিয়োগ এবং যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ ইতোমধ্যেই বিশ্বমঞ্চে আলোচনার বিষয়বস্তু।

ট্রাম্পের বক্তব্য ইঙ্গিত দেয় যে, ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্র পানামা খালের ওপর পুনরায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য কূটনৈতিক বা অন্যান্য পদক্ষেপ নিতে পারে। তবে এটি আন্তর্জাতিক আইন এবং কৌশলগত বাস্তবতার সঙ্গে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প বা যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো প্রশাসন যদি পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ নিতে আগ্রহ প্রকাশ করে, তার পেছনে বেশ কয়েকটি ভৌগোলিক, অর্থনৈতিক এবং কৌশলগত কারণ থাকতে পারে। পানামা খাল বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জলপথ, যা আটলান্টিক এবং প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে। এর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার ইচ্ছার পেছনে সম্ভাব্য কারণগুলো নিম্নরূপ:

১. কৌশলগত গুরুত্ব

পানামা খাল সামরিক এবং বাণিজ্যিক উভয় ক্ষেত্রেই কৌশলগত গুরুত্ব বহন করে। এটি যুক্তরাষ্ট্র এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য রুট। খালটির নিয়ন্ত্রণে থাকলে যেকোনো দেশ তার সামরিক এবং অর্থনৈতিক অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করতে পারে।

২. বাণিজ্যিক নিয়ন্ত্রণ

বিশ্ব বাণিজ্যের একটি বড় অংশ এই খালের উপর নির্ভরশীল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পানামা খালের মাধ্যমে পণ্য পরিবহনে অনেক সুবিধা পায়। খালটির নিয়ন্ত্রণে থাকলে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলো আরও সুবিধাজনক অবস্থানে থাকতে পারে।

৩. চীন-এর উপস্থিতি সীমিত করা

চীন বর্তমানে পানামা খালের আশেপাশে অনেক অবকাঠামোগত প্রকল্পে বিনিয়োগ করছে এবং সেখানে তাদের প্রভাব বাড়ছে। ট্রাম্প প্রশাসন চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা এবং এর বৈশ্বিক প্রভাব কমানোর লক্ষ্য নিয়ে কাজ করেছিল। তাই পানামা খাল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে চীনের উপস্থিতি সীমিত করা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কৌশলগত লক্ষ্য হতে পারে।

৪. ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি

১৯৭৭ সালে স্বাক্ষরিত টরিজোস-কার্টার চুক্তির মাধ্যমে পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ পানামার হাতে হস্তান্তর করা হয়েছিল। তবে ঐতিহাসিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র খালটির ওপর তার প্রভাব বজায় রেখেছিল। ট্রাম্প হয়তো খালটি পুনরায় যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করেছিলেন।

৫. অর্থনৈতিক স্বার্থ

পানামা খালের মাধ্যমে প্রতি বছর প্রচুর রাজস্ব আয় হয়। এর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বৈদেশিক মুদ্রা এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে আরও বেশি সুবিধা পেতে পারে।

৬. জাতীয় নিরাপত্তা

যুক্তরাষ্ট্রের জন্য পানামা খাল গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি দেশটির পূর্ব এবং পশ্চিম উপকূলের মধ্যে দ্রুত নৌ যোগাযোগের পথ। খালটির ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকলে জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র আরও নিশ্চিত থাকতে পারে।

এখন পর্যন্ত ট্রাম্প বা তার প্রশাসনের সরাসরি পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার কোনো ঘোষণা পাওয়া যায়নি। তবে এই ধরনের আগ্রহ যদি বাস্তব হয়, তা হলে তার পেছনে উল্লেখিত কারণগুলো প্রাসঙ্গিক হতে পারে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ