১৮ই জুলাই, বৃহস্পতিবার। বেলা ১১টা পর্যন্ত সাভারের সার্বিক পরিস্থিতি মোটামুটি স্বাভাবিকই ছিল। পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে ১১টার পর থেকে। ১১টার দিকে সর্বপ্রথম এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ আশপাশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সাভারের ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাকিজা মোড় এলাকায় অবস্থান নিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন।
এরপর বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর সদস্যরা পাকিজা এলাকায় অবস্থান নেন। আন্দোলনকারীরা এ সময় পুলিশকে উদ্দেশ্য করে স্লোগান দিতে শুরু করেন। পুলিশ তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারশেল নিক্ষেপ শুরু করলে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়। ভাঙচুর করা হয় একাধিক পুলিশ ভ্যান।
পুলিশের মুহুর্মুহু টিয়ারশেল ও রাবার বুলেটের মুখে এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান।
প্রায় একই সময়ে পুলিশ ও বিজিবি সদস্যদের পাশাপাশি ঘটনাস্থলে মাথায় হেলমেট পরে সশস্ত্র অবস্থান নেন আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সংগঠনের কয়েকশ নেতাকর্মী। তাদের সবার হাতে লোহার রড, বাঁশের লাঠি, রামদা; এমনকি বেশ কয়েকজনের হাতে পিস্তল ও শটগান ছিল।
সাভার উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান আতিক, উপজেলা চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজীবের আত্মীয় রুবেলসহ আরও অনেকেই সেদিন আগ্নেয়াস্ত্রসহ সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
আন্দোলনকারীরা ত্রিমুখী আক্রমণে ছত্রভঙ্গ হয়ে যাওয়ার পর পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা শক্ত অবস্থান নেন ওই এলাকায়। পাকিজা মসজিদের সামনে তখন কয়েকশ পুলিশ-বিজিবি সদস্য অবস্থান করছিলেন।
অন্যদিকে ছত্রভঙ্গ হওয়ার পর আন্দোলনকারীরা পুনরায় জড়ো হতে শুরু করেন সাভার বাস স্ট্যান্ড এবং এর আশপাশের বিভিন্ন গলি ও পয়েন্টগুলোতে।
বেলা সোয়া ১২টা নাগাদ দ্বিতীয় দফায় আবারও আন্দোলনকারীরা পাকিজা মোড় থেকে কিছুটা দূরে অবস্থিত সাভার মডেল মসজিদের সামনের মহাসড়কে নেমে এসে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সড়কে নেমে আসেন স্থানীয়রাও।
আবারও শুরু হয় ত্রিমুখী সংঘর্ষ। একদিকে পুলিশ, বিজিবি সদস্য এবং সশস্ত্র আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা, অন্যদিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী-জনতা।
পুলিশের মুহুর্মুহু টিয়ারশেল আর গুলির মুখে এবার আন্দোলনকারীরা আবারও কিছুটা পিছু হটে অবস্থান নেন সাভার মডেল মসজিদসংলগ্ন ব্যাংক কলোনী মহল্লার গলিসহ আশপাশের গলিগুলোতে।
সেখানে প্রায় আধাঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ধাওয়া-পালটা ধাওয়া ও সংঘর্ষ। এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীরা তাদের অবস্থান পরিবর্তন করে সাভার বাস স্ট্যান্ড এলাকার পুরাতন ওভার ব্রিজ, সিটি সেন্টার, রাজ্জাক প্লাজা ও মহাসড়কের বিপরীত দিকের সার্ভিস লেন এবং অলি-গলিগুলোতে অবস্থান নেন। পুরাতন ওভার ব্রিজের নিচে মহাসড়কের আরিচাগামী লেনের মূল লেনে লোহার ব্যারিকেড ও আগুন জ্বালিয়ে মহাসড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়। রণক্ষেত্রে পরিণত হয় গোটা এলাকা।
সূত্র : দি বিজনেস স্টান্ডার্ড

0 মন্তব্যসমূহ