পর্তুগালের এককক্ষবিশিষ্ট সংসদ Assembleia da República (প্রজাতন্ত্রের পরিষদ) দেশের নাগরিকত্ব ও অভিবাসন সংক্রান্ত আইনে প্রস্তাবিত একটি গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী বিশেষায়িত সংসদীয় কমিটির কাছে পাঠিয়েছে। এ সিদ্ধান্তটি ভবিষ্যতে জুলাইয়ের শেষদিকে একটি পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে চূড়ান্ত ভোটের পথ খুলে দিচ্ছে।
প্রস্তাবিত সংশোধনীটির মূল লক্ষ্য হলো—পর্তুগালে বৈধভাবে অবস্থান করা অভিবাসীদের নাগরিকত্ব প্রক্রিয়াকে সহজতর করা, বিশেষত ব্রাজিল, আফ্রিকা, দক্ষিণ এশিয়া ও পূর্ব ইউরোপের অভিবাসী সম্প্রদায়কে কেন্দ্র করে। আইনটি কার্যকর হলে হাজার হাজার অভিবাসীর নিয়মিতীকরণ, অধিকার সুরক্ষা ও সামাজিক সংহতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কী ধরনের পরিবর্তন প্রস্তাব করা হয়েছে?
সংসদীয় সূত্র অনুযায়ী, প্রস্তাবিত সংশোধনীর মধ্যে রয়েছে—
নাগরিকত্বের জন্য আবেদনের অপেক্ষাকাল কমিয়ে আনা (বর্তমানে ৫ বছর থেকে ৩ বছরে আনার প্রস্তাব)
অভিবাসীদের জন্মগত সন্তানদের জন্য নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকার সহজতর করা
কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে নাগরিকত্ব পেতে ভাষাগত শর্ত শিথিল করা
বৈধ বসবাস ও ট্যাক্স দেওয়ার ভিত্তিতে আবেদনকারীদের জন্য সহজতর প্রক্রিয়া তৈরি করা
তবে এসব পরিবর্তন এখনো কমিটির পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনার মধ্যে রয়েছে, এবং সংশোধনীগুলো চূড়ান্ত রূপে কীভাবে সংসদে পাস হয়, সেটিই বাস্তব রূপের নির্ধারক হবে।
ইউরোপজুড়ে একটি ধারাবাহিক পরিবর্তনের অংশ?
এই প্রক্রিয়াটি ইউরোপের অন্যান্য দেশের মতো একটি বড় কাঠামোগত ধারা পরিবর্তনের অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। সম্প্রতি ইতালি তার নাগরিকত্ব আইনে পরিবর্তন এনে ইতালীয় বংশোদ্ভূত ব্রাজিলিয়ানদের জন্য দ্রুত নাগরিকত্ব লাভের সুযোগ তৈরি করেছে। এর ফলে ইউরোপের দেশগুলো নাগরিকত্ব ও অভিবাসন নীতিতে কিছুটা নরম ভূমিকা নিচ্ছে বলে পর্যবেক্ষকদের ধারণা।
রাজনৈতিক পটভূমি
এই উদ্যোগকে ঘিরে পর্তুগালের রাজনৈতিক মহলে ভিন্নমত রয়েছে।
বামঘরানার রাজনৈতিক দলগুলো ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, এটি পর্তুগালের বহুজাতিক বাস্তবতাকে স্বীকৃতি দেওয়ার একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। তারা মনে করেন, এটি সামাজিক অন্তর্ভুক্তি, শ্রমবাজারে সমান সুযোগ এবং নাগরিক অধিকারের বিকাশে সহায়ক হবে।
অন্যদিকে কট্টর ডানপন্থী ও অভিবাসনবিরোধী দলগুলো আশঙ্কা করছে, এতে নাগরিকত্ব ব্যবস্থার গুরুত্ব ক্ষুণ্ণ হতে পারে এবং এটি অবৈধ অভিবাসন উৎসাহিত করার ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
সম্ভাব্য প্রভাব
নতুন আইনটি পাস হলে পর্তুগালে বসবাসরত প্রায় কয়েক লক্ষ অভিবাসীর বৈধতা ও অধিকার নিশ্চিত হবে, যারা বহু বছর ধরে এখানে কাজ করছেন ও কর প্রদান করছেন কিন্তু এখনো নাগরিকত্বের স্বীকৃতি পাননি।
বিশ্লেষকদের মতে, এই সংশোধনী পর্তুগালকে ইউরোপে একটি অধিক মানবিক অভিবাসননীতি গ্রহণকারী দেশ হিসেবে তুলে ধরতে পারে। একই সঙ্গে এটি পর্তুগালের শ্রমশক্তির ঘাটতি পূরণ, জনসংখ্যার বার্ধক্য রোধ এবং বহুত্ববাদী সমাজ নির্মাণে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।
পরবর্তী ধাপ কী?
আগামী জুলাই মাসের শেষদিকে সংসদের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে এই প্রস্তাব নিয়ে চূড়ান্ত ভোটাভুটি হতে পারে। ততদিন পর্যন্ত বিষয়ভিত্তিক কমিটি সংশোধনীগুলো নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাবে।
আইনটি পাস হলে তা কার্যকর করার জন্য একটি নির্বাহী আদেশ ও প্রশাসনিক কাঠামোর প্রয়োজন হবে, যার জন্য সরকারের প্রস্তুতি চলমান রয়েছে বলে জানা গেছে।
সংক্ষিপ্ত মূল্যায়ন:
এই প্রস্তাবিত আইনটি পর্তুগালের অভিবাসন ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ বাঁকবদল। এতে যেমন ইতিবাচক সম্ভাবনা রয়েছে, তেমনি রাজনৈতিক ও সামাজিক বিতর্কও চলমান। এখন দেখার বিষয়, চূড়ান্ত সংসদীয় সিদ্ধান্ত কোন পথে এগোয়।
0 মন্তব্যসমূহ